-ঠাম্মু ও ঠাম্মু, কই গেলে?
-আমি ছাদেএএএ, তোরা উঠে আয়!
দুদ্দার পায়ের শব্দে এক কচি মন উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ির ছাদে উঠে এল। তাকে দেখে পঁয়ষট্টিতে পা দেওয়া বহ্নি এক গাল হেসে এগিয়ে এল।
-এইত্তো। একী মাণিকজোড়ের দোসরের কী হল?
-ওর জ্বর, ঠাম্মু
-ওহ হো। সুতুটা বড্ড ভোগে। আমার মতো।
-আচ্ছা ঠাম্মু, আজ কী গল্প বলবে?
-বলব তো, দাঁড়া আগে টাটা বলি
-ওহ তোমার সুর্য এখনও যায়নি!
-বাবুই তুই খুব হিংসুটে হয়েছিস, এখুনি তো চলে যাবে। একটু দাঁড়া।
-এইইইই ঝুপ্পুস! গন ফর দ্য ডে। এবার স্টোরি টাইম। এস এস।
-বেশ, বোস। অমৃতা, আম্মু??
-আম্মু ক্লাস করাচ্ছে। বিরক্ত কেন করছ
-ওহ। না অনেকক্ষণ শব্দ পাই না। তাই ভাবলাম ছাত্র-ছাত্রীরা চলে গেছে।
-তুমি আর আম্মু এত্ত ঝগড়া করো আবার দুজনেই...
-চুপ পাকা ছেলে। শোন আজকের গল্প।
-সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা, সাল ২০২০... তখন তোদের বাবারা এ পাড়ায় আসেনি। ঐ বাড়িতে সান্যালরা থাকত। আমি তখন চাকরি করি।
-তুমি কী চাকরি করতে ঠাম্মু? তখন আম্মু কোথায় ছিল?
-এই যে প্রশ্নবিচিত্রা, কী গল্প শোনা হচ্ছে?
-এইত্তো আম্মু এসে গেছে। ইয়েএএএএ!
অমৃতার বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। চুলে পাক ধরেছে। ব্যক্তিত্ব চশমায় নয়, চোখের তারায়। অমৃতা আর বহ্নির এক চিলতে বাসায়, এই কচিকাঁচাগুলোই সব। প্রতি শনিবার এই গপ্পের আসর বসে। বহ্নির ছেলেমানুষীকে প্রশ্রয় দেয় অমৃতা। আর তাই একবারটি হলেও হাঁটুর ব্যথা সামলে ছাদে আসে। এই অনাবিল গপ্পের আসর দেখার লোভে। তারপর আবার চলে যায়। নাচের জগতের দিকপাল অমৃতার, সময় বড়ই বাঁধা ।।ছাত্রীদের ভিড় সামলাতে সুমনা, ওর সেক্রেটারি ক্লান্ত। বহ্নির স্বেচ্ছা অবসর। লেখার জগত থেকে ছুটি নিয়েছে। নতুন বই শুরু করার আগে ১ মাস বিশ্রাম।
-আচ্ছা গল্প চলুক, আমি যাই।
-আম্মু, এখন কিন্তু নি এক্সারসাইজ টাইম, কোরিওগ্রাফি নিয়ে বসে যাবি না
-তুই গল্প বল তো! উফফ। দেওয়াল ঘড়ি হয়ে উঠেছিস
-হাহাহাহাহ, ঠাম্মু দেওয়াল ঘড়ি। হাহাহাহ
-এই ফোক্কর! গল্প বলব না কিন্তু।
-আচ্ছা সরি সরি বলো।
অমৃতার পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেল। গল্পে ফিরল বহ্নি
-হ্যাঁ যা বলছিলাম, বছর তিরিশ আগের কথা। পৃথিবীর অসুখ করেছিল। সে এক আজব অসুখ।
-পৃথিবীর অসুখ??
-হ্যাঁ রে। একটা খুব দুষ্টু ভাইরাস, নাম করোনা। করোনা ভাইরাস অ্যাটাক করেছিল পৃথিবীকে। দুশোর ওপর দেশে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অতিমারী বলা হয়েছিল রোগটাকে
-অতিমারী?? মানে কী ঠাম্মু?
-অতিমারী মানে প্যানডেমিক। যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।
-তারপর?
-লকডাউন হয়েগেছিল গোটা বিশ্ব। বাড়ি থেকে বেরনোর অনুমতি ছিল না মাসের পর মাস।
-কী বলছ ঠাম্মু! স্কুল কলেজ? চাকরি?
-স-অ-অ-ব বন্ধ। সে এক যুদ্ধ লড়েছি আমরা সকলে বাবুই। এখন ভাবলে স্বপ্নের মতো মনে হয়।আম্মু তখন কেরিয়ারের পীকে। নাচের কনসার্ট সিংগাপুরে। ক্যান্সেল হয়ে গেল।
-যাহ! দুঃখ হয়নি?
-নাহ। তোর আম্মু স্ট্রং। আমিই বরং কেঁদে টেদে একসা
-হাহাহহাহা তুমি কী বাচ্চা নাকি!
-তা একরকম বলতে পারিস। তারপর শোন না। প্রতিদিন সবার শুধু একটাই আলোচনা। কজন মারা গেল। কতজন সুস্থ হল। কী ফাইটটাই না দিয়েছিল ডাক্তাররা। পুলিশরা। সাফাইকর্মীরা। জানিস বাবুই সব খারাপের মধ্যেও করোনা বিশ্বের মানুষকে এক করে দিয়েছিল। লড়াই ভুলে যাওয়া মানুষ নতুন করে জেগে উঠেছিল
-হ্যাঁ ঠাম্মু আমাদের ইংলিশ মিস বলেন নাথিং ইউনাইটস লাইক ক্রাইসিস!
-বাবাহ বাবুই তুই তো বড় হয়ে গেছিস।
-আমার আর আম্মুর দেখা হয়নি ৩ মাস!
-ছিলে কী করে??? সুতুকে না দেখে তো আমি একদিনও থাকতে পারব না!!
-পারতেও যেন না হয়। তবে ঐ যে বললি নাথিং ইউনাইটস লাইক ক্রাইসিস। ঐ তিন মাসে আমি বুঝেছিলাম আসলে আমরা কতটা কাছে। করোনা মেড ম্যাজিক। বুঝলে বাবুই বাবু। খারাপ তো হয়েইছে। কিন্তু কিছু মিরাকেলও হয়েছে। আমরা এত্ত গর্ব করি যে আমরা সুপ্রিম, করি তো?
-হ্যাঁ হিউমানস আর অন দ্য টপ।
-হ্যাঁ সেই ধারণাটা একদম শেষ হয়ে গেছিল। তুই ভাব। ভাইরাস, চোখে দেখা যায় না। গৃহবন্দী করে দিয়েছিল সারা বিশ্বের মানুষকে।
-আচ্ছা ঠাম্মু এই যে আগে চিড়িয়াখানা হত এখন আর নেই..
-ঠিক ধরেছ তোপসে। করোনার কারণেই মানুষ বোঝে খাঁচায় থাকা কী। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। সব বড় বড় দেশ, যে আর খাঁচা বন্দী হবে না কেই। শুধু পশু পাখিদের রিহ্যাব আর চিকিৎসার জন্য ফেসিলিটি থাকবে।
-তারপর তারপর?
-তারপর একদিন ভোরে খবর এল। লকডাউন উঠছে। ওষুধ কাজ করেছে! আম্মুর ফোনে ঘুম ভাঙল আমার। আর সব বন্ধুরা উৎসব করছে। বিজয় মিছিল করে ময়দান যাচ্ছে কলকাতা। তাত মাস দুয়েক পর ভ্যাক্সিনও বেরল।
-ফেরিটেলের মতো লাগছে ঠাম্মু! সেই গুপি গাইন বাঘা বাইনে যেমন ওষুধ দিয়ে সবার মুখে কথা ফিরেছিল তেমন!!
-তেমনই তো। তেমনই তো।
-ঠাম্মু?
-বল?
-আই লাভ ইউ অ্যান্ড আই লাভ আম্মু টু। এইরকম প্যানডেমিক না না অ-তি-মারী আবার হলে। আমি আর সুতুও তোমাদের মতো ব্রেভ হব।
-হবিই তো। যাও এবার বাবা মা চিন্তা করবে। যাওয়ার সময় আম্মু কেক বানিয়েছে নিয়ে যাস।
-আচ্ছা।
-বাবুই, সুতুর জন্যও নিয়ে যা। আর জ্বর কমেছে কি না জানাস। আর আম্মুকে বল আমি নামছি।নাহলে এখুনি হাঁটুতে চাপ দিয়ে উঠবে।
-টাটা ঠাম্মু
-টাটা সোনা।
-আমি ছাদেএএএ, তোরা উঠে আয়!
দুদ্দার পায়ের শব্দে এক কচি মন উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ির ছাদে উঠে এল। তাকে দেখে পঁয়ষট্টিতে পা দেওয়া বহ্নি এক গাল হেসে এগিয়ে এল।
-এইত্তো। একী মাণিকজোড়ের দোসরের কী হল?
-ওর জ্বর, ঠাম্মু
-ওহ হো। সুতুটা বড্ড ভোগে। আমার মতো।
-আচ্ছা ঠাম্মু, আজ কী গল্প বলবে?
-বলব তো, দাঁড়া আগে টাটা বলি
-ওহ তোমার সুর্য এখনও যায়নি!
-বাবুই তুই খুব হিংসুটে হয়েছিস, এখুনি তো চলে যাবে। একটু দাঁড়া।
-এইইইই ঝুপ্পুস! গন ফর দ্য ডে। এবার স্টোরি টাইম। এস এস।
-বেশ, বোস। অমৃতা, আম্মু??
-আম্মু ক্লাস করাচ্ছে। বিরক্ত কেন করছ
-ওহ। না অনেকক্ষণ শব্দ পাই না। তাই ভাবলাম ছাত্র-ছাত্রীরা চলে গেছে।
-তুমি আর আম্মু এত্ত ঝগড়া করো আবার দুজনেই...
-চুপ পাকা ছেলে। শোন আজকের গল্প।
-সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা, সাল ২০২০... তখন তোদের বাবারা এ পাড়ায় আসেনি। ঐ বাড়িতে সান্যালরা থাকত। আমি তখন চাকরি করি।
-তুমি কী চাকরি করতে ঠাম্মু? তখন আম্মু কোথায় ছিল?
-এই যে প্রশ্নবিচিত্রা, কী গল্প শোনা হচ্ছে?
-এইত্তো আম্মু এসে গেছে। ইয়েএএএএ!
অমৃতার বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। চুলে পাক ধরেছে। ব্যক্তিত্ব চশমায় নয়, চোখের তারায়। অমৃতা আর বহ্নির এক চিলতে বাসায়, এই কচিকাঁচাগুলোই সব। প্রতি শনিবার এই গপ্পের আসর বসে। বহ্নির ছেলেমানুষীকে প্রশ্রয় দেয় অমৃতা। আর তাই একবারটি হলেও হাঁটুর ব্যথা সামলে ছাদে আসে। এই অনাবিল গপ্পের আসর দেখার লোভে। তারপর আবার চলে যায়। নাচের জগতের দিকপাল অমৃতার, সময় বড়ই বাঁধা ।।ছাত্রীদের ভিড় সামলাতে সুমনা, ওর সেক্রেটারি ক্লান্ত। বহ্নির স্বেচ্ছা অবসর। লেখার জগত থেকে ছুটি নিয়েছে। নতুন বই শুরু করার আগে ১ মাস বিশ্রাম।
-আচ্ছা গল্প চলুক, আমি যাই।
-আম্মু, এখন কিন্তু নি এক্সারসাইজ টাইম, কোরিওগ্রাফি নিয়ে বসে যাবি না
-তুই গল্প বল তো! উফফ। দেওয়াল ঘড়ি হয়ে উঠেছিস
-হাহাহাহাহ, ঠাম্মু দেওয়াল ঘড়ি। হাহাহাহ
-এই ফোক্কর! গল্প বলব না কিন্তু।
-আচ্ছা সরি সরি বলো।
অমৃতার পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেল। গল্পে ফিরল বহ্নি
-হ্যাঁ যা বলছিলাম, বছর তিরিশ আগের কথা। পৃথিবীর অসুখ করেছিল। সে এক আজব অসুখ।
-পৃথিবীর অসুখ??
-হ্যাঁ রে। একটা খুব দুষ্টু ভাইরাস, নাম করোনা। করোনা ভাইরাস অ্যাটাক করেছিল পৃথিবীকে। দুশোর ওপর দেশে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অতিমারী বলা হয়েছিল রোগটাকে
-অতিমারী?? মানে কী ঠাম্মু?
-অতিমারী মানে প্যানডেমিক। যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।
-তারপর?
-লকডাউন হয়েগেছিল গোটা বিশ্ব। বাড়ি থেকে বেরনোর অনুমতি ছিল না মাসের পর মাস।
-কী বলছ ঠাম্মু! স্কুল কলেজ? চাকরি?
-স-অ-অ-ব বন্ধ। সে এক যুদ্ধ লড়েছি আমরা সকলে বাবুই। এখন ভাবলে স্বপ্নের মতো মনে হয়।আম্মু তখন কেরিয়ারের পীকে। নাচের কনসার্ট সিংগাপুরে। ক্যান্সেল হয়ে গেল।
-যাহ! দুঃখ হয়নি?
-নাহ। তোর আম্মু স্ট্রং। আমিই বরং কেঁদে টেদে একসা
-হাহাহহাহা তুমি কী বাচ্চা নাকি!
-তা একরকম বলতে পারিস। তারপর শোন না। প্রতিদিন সবার শুধু একটাই আলোচনা। কজন মারা গেল। কতজন সুস্থ হল। কী ফাইটটাই না দিয়েছিল ডাক্তাররা। পুলিশরা। সাফাইকর্মীরা। জানিস বাবুই সব খারাপের মধ্যেও করোনা বিশ্বের মানুষকে এক করে দিয়েছিল। লড়াই ভুলে যাওয়া মানুষ নতুন করে জেগে উঠেছিল
-হ্যাঁ ঠাম্মু আমাদের ইংলিশ মিস বলেন নাথিং ইউনাইটস লাইক ক্রাইসিস!
-বাবাহ বাবুই তুই তো বড় হয়ে গেছিস।
-আমার আর আম্মুর দেখা হয়নি ৩ মাস!
-ছিলে কী করে??? সুতুকে না দেখে তো আমি একদিনও থাকতে পারব না!!
-পারতেও যেন না হয়। তবে ঐ যে বললি নাথিং ইউনাইটস লাইক ক্রাইসিস। ঐ তিন মাসে আমি বুঝেছিলাম আসলে আমরা কতটা কাছে। করোনা মেড ম্যাজিক। বুঝলে বাবুই বাবু। খারাপ তো হয়েইছে। কিন্তু কিছু মিরাকেলও হয়েছে। আমরা এত্ত গর্ব করি যে আমরা সুপ্রিম, করি তো?
-হ্যাঁ হিউমানস আর অন দ্য টপ।
-হ্যাঁ সেই ধারণাটা একদম শেষ হয়ে গেছিল। তুই ভাব। ভাইরাস, চোখে দেখা যায় না। গৃহবন্দী করে দিয়েছিল সারা বিশ্বের মানুষকে।
-আচ্ছা ঠাম্মু এই যে আগে চিড়িয়াখানা হত এখন আর নেই..
-ঠিক ধরেছ তোপসে। করোনার কারণেই মানুষ বোঝে খাঁচায় থাকা কী। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। সব বড় বড় দেশ, যে আর খাঁচা বন্দী হবে না কেই। শুধু পশু পাখিদের রিহ্যাব আর চিকিৎসার জন্য ফেসিলিটি থাকবে।
-তারপর তারপর?
-তারপর একদিন ভোরে খবর এল। লকডাউন উঠছে। ওষুধ কাজ করেছে! আম্মুর ফোনে ঘুম ভাঙল আমার। আর সব বন্ধুরা উৎসব করছে। বিজয় মিছিল করে ময়দান যাচ্ছে কলকাতা। তাত মাস দুয়েক পর ভ্যাক্সিনও বেরল।
-ফেরিটেলের মতো লাগছে ঠাম্মু! সেই গুপি গাইন বাঘা বাইনে যেমন ওষুধ দিয়ে সবার মুখে কথা ফিরেছিল তেমন!!
-তেমনই তো। তেমনই তো।
-ঠাম্মু?
-বল?
-আই লাভ ইউ অ্যান্ড আই লাভ আম্মু টু। এইরকম প্যানডেমিক না না অ-তি-মারী আবার হলে। আমি আর সুতুও তোমাদের মতো ব্রেভ হব।
-হবিই তো। যাও এবার বাবা মা চিন্তা করবে। যাওয়ার সময় আম্মু কেক বানিয়েছে নিয়ে যাস।
-আচ্ছা।
-বাবুই, সুতুর জন্যও নিয়ে যা। আর জ্বর কমেছে কি না জানাস। আর আম্মুকে বল আমি নামছি।নাহলে এখুনি হাঁটুতে চাপ দিয়ে উঠবে।
-টাটা ঠাম্মু
-টাটা সোনা।

3 comments:
...:)
Sei 26th april likhe6o akhn pray ktha gulo sotti hte chole6e....
Interesting.
Post a Comment